আকাশ থেকে লিফলেট দিয়ে গাজা নগরী ছাড়ার নির্দেশ: ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার আকাশ থেকে লিফলেট ফেলে সরিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আপনাদের সতর্ক করা হয়েছে – এখনই সরে যান।”

মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম রয়াটার্স এমন তথ্য জানিয়েছেন।

যুদ্ধ শুরুর আগে যেখানে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষের বসবাস ছিল, সেই নগরীকে হামাসের শেষ ঘাঁটি ধ্বংসের লক্ষ্যে চূড়ান্তভাবে আক্রমণ করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এ ঘোষণা এসেছে। তবে কোথাও নিরাপদ আশ্রয় না থাকায় এ নির্দেশ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। অনেকে দক্ষিণে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও অনেকেই জানিয়েছেন তাঁরা থেকে যাবেন।

হাসপাতাল খালি করার সিদ্ধান্ত

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আল শিফা ও আল আহলি-এই দুটি প্রধান কার্যকর হাসপাতাল সরিয়ে নেওয়া হবে, তবে রোগীদের ছেড়ে যাবেন না চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি হাসপাতালগুলো রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “হাজারো রোগী ও আহতের জীবন হুমকির মুখে।”

ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি

হামাসের ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েলি পাল্টা অভিযানে ইতিমধ্যে ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব। প্রায় সবাই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং মারাত্মক খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েল গাজা নগরীর মানুষকে দক্ষিণ উপকূলীয় আল-মাওয়াসি অঞ্চলের তথাকথিত “মানবিক এলাকা”য় যেতে বলেছে, যদিও সেখানেও নিয়মিত বোমাবর্ষণ চলছে। এক বাসিন্দা উম সামেদ (৫৯) বলেন, “পছন্দটা এখন এই-গাজায় থেকে মারা যাওয়া, নাকি দক্ষিণে গিয়ে মারা যাওয়া।”

আসছে ‘প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়’

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, হামাস বন্দি মুক্তি না দিলে গাজা ধ্বংসে “এক প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়”চালানো হবে। ইতিমধ্যে হাজারো রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি চলছে। নেতানিয়াহু জানান, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীতে প্রবেশের সংগঠন ও সমাবেশ করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

যুদ্ধবিরতি আলোচনার পথে এ অভিযান বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইউরোপের কয়েকটি দেশ চলতি মাসে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, যা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করছে। সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েলের পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের মানবিক দুর্দশা আরও বাড়াবে।

জাতিসংঘের ওপর নির্ভরশীল একটি বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষক সংস্থা ইতিমধ্যে গাজার কিছু এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে।

এদিকে গাজায় সহায়তা নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা এক নৌ-অভিযানের প্রধান জাহাজ মঙ্গলবার তিউনিসিয়ার বন্দরে ড্রোন হামলার শিকার হয়। এতে সুইডিশ কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও যুক্ত ছিলেন বলে আয়োজকরা জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *