আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলি সেনাদের নতুন সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে। ‘গিডিওন চ্যারিওটস’ নামের এই অভিযানের লক্ষ্য গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র গাজা সিটি দখল করা। বুধবার (২০ আগস্ট) ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলা ও অবরোধজনিত সংকটে একদিনেই অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে অনাহারে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের এবং মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এ তথ্য জানায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, তাদের ৯৯তম ডিভিশন ইতোমধ্যে গাজা সিটির উপকণ্ঠ আল-জাইতুন এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি হামাস সুড়ঙ্গ উন্মোচন করেছে। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনারা। গাজার বিভিন্ন এলাকায় ভারী বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে অতিরিক্ত ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকা হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ব্যাটালিয়নের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
অভিযানের মধ্যে গাজার প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, নতুন দফায় সামরিক হামলা ও জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিও জানিয়েছে, ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা এখন বাস্তুচ্যুতির হুমকির মুখে।
শুধু বুধবারেই গাজার দক্ষিণাঞ্চলে একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের ওপর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। একইদিনে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন ফিলিস্তিনি জাতীয় বাস্কেটবল দলের সাবেক তারকা খেলোয়াড় মোহাম্মদ শালানসহ অন্তত ৩০ জন। ফলে যুদ্ধশুরুর পর থেকে অনাহার ও খাদ্যাভাব-সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৯ জনে, যাদের মধ্যে শিশু ১১২ জন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি কেবল ক্ষুধা নয়, সরাসরি অনাহারে রূপ নিয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করে জানায়, ‘অপুষ্টি হলো এক নীরব হত্যাকারী, যা জীবনভর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি ডেকে আনে এবং সাধারণ অসুখকেও প্রাণঘাতী করে তোলে।’ ইউএনআরডব্লিউএ’র তথ্য অনুযায়ী, গাজা সিটির প্রতি তিন শিশুর মধ্যে একজন এখন মারাত্মকভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে।
হামাস এই অভিযানকে ‘গণহত্যার অংশ’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে মানবিক বিপর্যয়ের পূর্ণ দায়ভার বহন করতে হবে। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ হামলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করছেন।