জুলাই মাসের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান আবারও দেশের সড়ক নিরাপত্তার ভয়াবহ চিত্র সামনে এনেছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র এক মাসে ৪৪৩টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪১৮ জন, আহত হয়েছেন ৮৫৬ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেশি। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই মৃত্যুর বড় অংশ জুড়ে আছে—শুধু এই এক খাতে প্রাণ গেছে মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। এর সঙ্গে পথচারী, চালক ও সহকারীদের মৃত্যু যুক্ত হয়ে সড়ক নিরাপত্তাহীনতার ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট করেছে। নৌ ও রেল দুর্ঘটনার খবরও পরিস্থিতিকে জটিলতর করেছে।
দুর্ঘটনার কারণগুলো নতুন নয়—ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, এবং গণপরিবহন খাতে অনিয়ম ও চাঁদাবাজি। বহু বছর ধরে বিশেষজ্ঞরা এসব সমস্যার কথা বলে আসছেন, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপের অভাবই পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রেখেছে। দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, মহাসড়কে আলাদা সার্ভিস রোড নির্মাণ, চাঁদাবাজি বন্ধ, এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করা—এসব নীতি বহুবার আলোচনায় এলেও বাস্তবে প্রয়োগের গতি শ্লথ।
প্রধান বাধা হলো অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবহন খাতে প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠীর আধিপত্য, এবং আইন প্রয়োগে শিথিলতা। এর ফলে প্রতিদিন মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিটি দুর্ঘটনা শুধু একটি প্রাণহানি নয়—এটি একেকটি পরিবারকে গভীর শোক, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সংকটে ফেলে দেয়; যা কোনো পরিসংখ্যান দিয়ে পূর্ণভাবে বোঝানো সম্ভব নয়।
এখন দায়সারা প্রতিবেদন প্রকাশের সময় শেষ। প্রয়োজন বাস্তবায়নযোগ্য নীতি, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং পরিবহন খাতের অনিয়মে রাজনৈতিক প্রভাব কমানো। অন্যথায় প্রতিমাসে নতুন পরিসংখ্যান আসবে, শত শত প্রাণ ঝরবে, আর সড়ক রয়ে যাবে মৃত্যুফাঁদ হিসেবেই।